মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ের কোন এক ক্লাসের
বাংলা বইয়ে একটি গল্প পড়েছিলাম।
আজ তার নাম মনে নেই তবে গল্পটি
মনে আছে। গল্পটিতে রোবটের
কথা বলা হয়েছিল। সেখানে একটি
অফিসের বস একই সাথে দুই জায়গায়
দুইটি অফিসে উপস্থিত থাকার
কথা বলা হয়েছিল। কি অবাক হচ্ছেন?
অবাক হবার কিছু
নাই , এক
অফিসে তিনি অফিস করতেন, আরেক অফিসে তারই
চেহারার রোবট বসে তার প্রক্সি
দিচ্ছে। এই ঘটনাগুলো এখন
হরহামেশা বিভিন্ন সিনেমায়
দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে এই
রোবট প্রযুক্তি অনেক জায়গায়
স্থান করে নিচ্ছে। প্রযুক্তি
এছাড়াও আরো নানান জায়গায় তার
আসনকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে।
সেই প্রযুক্তি নিয়ে আজ কিছু
বলতে চাই।
প্রযুক্তির
সাথে যে প্রত্যয় সবচেয়ে বেশি
জড়িত তা হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি একে অপরের সাথে
ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিজ্ঞান
নিত্যনতুন জ্ঞান অনুসন্ধান
করে নব নব আবিষ্কার করে আর সেই
আবিষ্কারকে কাজে লাগায়
প্রযুক্তি। একটি উদাহরণ দিলে
বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
গরমের
সময় আমাদেরকে যা সবচেয়ে বেশি
স্বস্তি দেয় তা হলো মাথার উপর
ঘুরতে থাকা বৈদ্যুতিক পাখা।
বিদ্যুতের প্রভাবে মোটর ঘুরবে
এটি বিজ্ঞান। এই জ্ঞানকে কাজে
লাগিয়ে যে যন্ত্র তৈরি করে
মাথার উপর ঘোরানো হয় তাই প্রযুক্তি। আর আমরা এই প্রযুক্তির
কল্যাণে একটু স্বস্তি লাভ
করছি।
কিন্তু
এই প্রযুক্তি কি সত্যিই আমাদের
স্বস্তি দিচ্ছে?
আমরা কি একবারও
ভেবে দেখছি প্রযুক্তির অপর
পিঠ। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে
চাই।
অনেকেই
নিশ্চয়ই টিভিতে হাতে টানা
পাখা দেখেছেন। এই পাখা এক বা
একাধিক কর্মচারী হাত দিয়ে
টানতো, যাদেরকে
পাঙ্খাওয়ালা বলা হতো। তারা
পাখা টানতেন আর রাজা বাদশারা
তাদের শরীর জুড়িয়ে নিত। আজ
তার স্থান দখল করে নিয়েছে
বৈদ্যুতিক পাখা আর এতে করে
কাজ হারাতে হয়েছে ঐসব
পাঙ্খাওয়ালাদের। যার আয়ে
হয়তো তারা তাদের সংসার চালাতো।
আপনি
হয়তো বলবেন এক কাজ হারিয়েছে
তো কি হয়েছে। আরও কত কাজ আছে
তা করলেই তো হয়?
কিন্তু কি কাজ
করবে? হাল
চাষ করবে? তার
জায়গা দখল করেছে ট্রাক্টর,
আগে যেখানে সেই
সাতসকালে একদল লোক কাঁধে
লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে মাঠে যেত
তার জায়গায় এখন একজন মানুষ
একটি ট্রাক্টর নিয়ে সারা মাঠ
একাই চাষ করছে।
সেদিন
টিভির একটি শোতে একটি বিশ্ববিখ্যাত
গাড়ী তৈরির কোম্পানীর গাড়ি
তৈরি করা দেখলাম। শোতে গাড়ী
তৈরির বিভিন্ন ধাপ দেখানো
হলো। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য
করলাম, এতো
বড় কোম্পানীতে লোক মাত্র হাতে
গোনা কয়েকজন। বাকি সব নানান
ধরনের মেশিন,
রোবটিক হাত,
কিংবা রোবট। যারা
আশ্চর্য দক্ষতার সাথে নিখুত
ভাবে গাড়ি তৈরির বিভিন্ন ধাপ
সমাধান করছে। এখানেও মানুষের
স্থান দখল করে নিয়েছে প্রযুক্তি।
এতে করে মানুষ কর্মহীন হয়ে
যাচ্ছে। তার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে
একধরনের প্রতিযোগিতা।
মানুষের
কাজের জায়গা কমে যাওয়ায় মানুষকে
যন্ত্রের মতো কাজ করে প্রতিযোগিতা
করতে হচ্ছে একে ওপরের সাথে।
যেমনটা আমরা দেখতে পাচ্ছি
চীন, জাপান,
কোরিয়া ইত্যাদি
উন্নত দেশসমূহে। যেখানে
মানুষের জন্য কাজের ক্ষেত্র
এতো সঙ্কুচিত যে তাদেরকে কাজ
টিকিয়ে রাখার জন্য যান্ত্রিক
হতে হচ্ছে।
এই
কারণে ভয় লাগে,
কখন আমার কাজের
জায়গায় কোন যন্ত্র এসে আমার
কাজের স্থান দখল করে নেয়।
যেভাবে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে
তাতে করে দেখা যাবে সব কাজ
অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে। কল্পনা
করুন তো, আজ
থেকে পাঁচ বছর পরের কথা-
এখন
যেমন বাসায় বুয়ারা কাজ করে
তখন আর তা লাগবে না,
তখন এমন এক যন্ত্র
থাকবে যে আপনি যন্ত্রের একদিকে
গম ভরে রাখবেন। রাতে শোয়ার
সময় আপনার ল্যাপটপে কমান্ড
দিয়ে রাখবেন কাল কয়টা পরোটা
ভাজা হবে। সেই মেশিন ঠিক সময়ে
আপনার সামনে গম থাকে আটা পিষে,
গুলে,
বেলে পরোটা বানিয়ে
হাজির করবে। আর একটি মেশিন
ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে ওমলেট
বানিয়ে সাজিয়ে রাখবে আপনার
খাওয়ার টেবিলে,
এতে করে অবধারিত
ভাবে কাজ হারাবে ঐ বুয়া।
তাইতো
শঙ্কা হয়। প্রযুক্তি কখন কী
করে বসে। কখন না আবার আমার
কর্মক্ষেত্রের দিকে হাত বাড়ায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় প্রযুক্তি
কি তবে আমার কর্মক্ষেত্র কেড়ে
নিবে??