Sunday, November 13, 2011

এটিএমের টাকা আর গুগলের জ্ঞান-নহে টাকা, নহে জ্ঞান হলে প্রয়োজন


একদিন আমাদের ম্যাডাম ক্লাসে বলেছিল তোমাদের কার কার এটিএম কার্ড আছে? দুই একজন বাদে বেশির ভাগই বলেছিলাম নাই। শুনে ম্যাডাম বলেছিলেন আজকের দিনে এটিএম কার্ড না থাকলে তাকে নাকি আধুনিক বলা যায়না। ম্যাডাম আমাদের পড়াতেন আধুনিক অর্থনীতি। তখন এটিএম কার্ড কী তা
ভালো করে জানতাম না। আমার মনে হলো আইন না জানা যেমন একধরনের অপরাধ সেরকম এটিএম কার্ড কী তা না জানাটাও হয়তো একধরনের অপরাধ। দেরি না করে ব্যাংকার মামাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। মামা ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকুরী করেন। তিনিও সুযোগ বুঝে আমাকে একটি একাউন্ট খুলে দিলেন। আমি কয়েক সপ্তাহ পরে একটি কার্ড পেলাম। এটিএম কার্ড। হু এখন আমি আধুনিক হলাম, অহংকারে পা আর মাটিতে পড়েনা। কয়জনের এমন কার্ড আছে??

তখন জানলাম, আমার কাছে থাকা কার্ডটি নাকি চলন্ত ব্যাংক। আমি যেখানে যাবও ব্যাংকও আমার সাথে থাকবে* (*শর্ত প্রযোজ্য-এটিএম বুথ থাকা লাগবে)। বাসা থেকে যে টাকা আনতাম তা ব্যাংকে জমা রাখতাম। তারপর মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলেই একশত টাকা বুথ থেকে তুলতাম ও খরচ করতাম। আবার শুনলাম কিছু কিছু দোকানে নাকি এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। তাও করলাম। এরপর কেটে গেল কয়েকটি বছর।

একটি চাকুরী পেলাম, নিয়োগ পাওয়ার পর শুনলাম এখানকার বেতন নাকি সরাসরি ব্যাংকে চলে যায়। তাও আবার আমার যে ব্যাংকে একাউন্ট আছে সেই ব্যাংকে নাকি চলে যাবে। তাই আমার এ সম্পর্কে নতুন করে কিছু ভাবতে হলো না। আমার তো আগেই একাউন্ট করা আছে। এবার টাকা পাবো আর বুথ থেকে তুলে খরচ করবো। কি মজার!!

মজা টের পেলাম কয়েকদিন পরেই। ঢাকা শহরে এখন আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বুথ। কিন্তু নেটওয়ার্ক সেই তুলনায় অপ্রতুল। তাই মাঝে মাঝে টাকা তুলতে গেলে দেখি অফলাইন।

এ সম্পর্কে আমার একটি বাজে অভিজ্ঞতা হলো- অফিসের কাজে কুমিল্লা যাচ্ছি, সকালে ট্রেনে যাবো, অফিস থেকে কিছু টাকা দেওয়া আছে। আমার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনেও কিছু টাকা দরকার। তাই সকালে ট্রেনে উঠার আগে কমলাপুরের বুথে কার্ডটি প্রবেশ করালাম। বলে পাসওয়ার্ড নাকি ভুল। ওমা কি বলে?? আমার নিজের দেওয়া পাসওয়ার্ড ভুল হয় কি করে। আমি আবারো কার্ড প্রবেশ করালাম। এবারো ভুল। আমার কিছুটা রাগ হলো। আমি আমি আবারো একই কাজ করলাম। এবার কার্ডটি মেশিন সযত্নে তার অভ্যন্তরে রেখে দিল। আমি এখন কী করি। এদিকে ট্রেনের সময় হয়ে যাচ্ছে, ওদিকে এমন একটি সমস্যা। কার্ডের মায়া ত্যাগ করে আমি ট্রেনের দিকে দিলাম ছুট। ভাগ্যিস হাতে কিছু টাকা ছিল। না হলে কী যে হতো??

এমন ঘটনা এই শেষ নয়, মাঝে মাঝেই প্রয়োজনের সময় কয়েকটি ঘটনা ঘটে- বুথ বন্ধ থাকা, অফলাইন থাকা, টাকা না থাকা।

শেষ কাহিনীটি হলো- কয়েকদিন আগে (ঈদের আগে বৃহঃবার) বাসায় যাচ্ছি, কিছু টাকা তোলার দরকার। সহকর্মীরা বুথে গিয়ে ঘুরে এসেছে। উত্তরার জসিমউদ্দিনের বুথে সেই টঙ্গি থেকে মানুষ এসেছে টাকা তুলতে। তার মানে উত্তরা টু টঙ্গির সব বুথেই একই সমস্যা। টাকা নাই। তাই আমি আর বুথে গেলাম না। ভাবলাম আমার শহরে গিয়েই টাকা তুলবো। কিন্তু কোথায় কী। ওখানেও একই অবস্থা। শুক্র, শনি, রবি তিনদিন সারা শহরের সব কয়টা বুথে ঘুরলাম, কিন্তু কোনটাই খোলা নেই। সামনে কোরবানির পশু কিনতে হবে। টাকা পাই কোথায়। শেষে ধার করে কোরবানির পশু কিনলাম আর বুথগুলোর দিকের উদাস নয়নে তাকিয়ে রইলাম। ভাবলাম ঐ মেশিনে আমার কত টাকা, কিন্তু তারপরও আমি নিঃস্ব। কবি কি একারনেই লিখেছিল-
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন
আর গুগলের কথা আজ আর না হয় নাই বললাম। এক কথায় আমাদের সবকিছু হাতের কাছে এনে দিয়ে কেমন যেন অলস করে দিচ্ছে। সে কথা আরেক দিন হবে।

Creative Commons License

আপনার মন্তব্য লিখুন

ফেসবুক লাইক ও শেয়ার