মায়ের আদুরে
গলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মাহতাবের।
ঘুম
ভাঙ্গে কিন্তু চোখও খুলে না,
সারাও দেয় না।
এখন চোখ খোলা মানে বিছানা
ছাড়া। ঘুম ভাঙ্গার পর এক
মুহূর্তও বিছানায় থাকার অনুমতি
নেই। মায়ের ডাকে বুঝতে পারে
ভোর হয়েছে কিন্তু এই শীতের
ভোরে কিছুতেই বিছানা ছাড়তে
ইচ্ছে হয়না।
মায়ের
মত মা ডেকেই যাচ্ছে,
মাহতাব না শোনার
ভান করে বিছানায় শুয়েই আছে।
মাহতাব তার অতীত অভিজ্ঞতা
থেকে জানে মা এভাবে দশ মিনিট
ডাকবে। এরপর পাঁচ মিনিট বিরতি
দিয়ে আবার আসবে। তখন ডাকের
সাথে থাকবে বকা। এ হল নিত্যদিনের
নৈমিত্তিক ঘটনা। এই সময়ে
মাহতাব মায়ের উপর বিরক্ত হয়।
আহা!
কত সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেল। মাত্রই বল নিয়ে বিপক্ষ দলের গোলবারের কাছে চলে এসেছিল। শট করাটা বাকি আর মিনিট খানিক সময় পেলেই রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েই দিত। ঠিক সেই সময়েই মায়ের ডাক। কাহাতক আর সহ্য করা যায়?
কত সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেল। মাত্রই বল নিয়ে বিপক্ষ দলের গোলবারের কাছে চলে এসেছিল। শট করাটা বাকি আর মিনিট খানিক সময় পেলেই রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েই দিত। ঠিক সেই সময়েই মায়ের ডাক। কাহাতক আর সহ্য করা যায়?
ফুটবল
মাহতাবের একটি প্রিয় খেলা।
স্বপ্নে প্রতি রাতেই খেলে
কিন্তু বাস্তবে খেলার সময় ও
সুযোগ পাওয়া যেন সোনার হরিণ
পাওয়ার মতোই। তার খুব ইচ্ছে
বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার কিন্তু
তার বাবা-মায়ের
ইচ্ছে বড় হয়ে তাদের ছেলে ডাক্তার
হবে। এজন্য প্রস্তুতিও কম
না, মাহতাব
মাত্রই নবম শ্রেণীতে ভর্তি
হয়েছে। কিন্তু পড়ার বাহার
দেখলে মনে হবে এবার মেডিকেলে
ভর্তি হওয়ার তার শেষ চান্স।
যথারীতি
দেশী-বিদেশি
বেশ কিছু বকা শুনতে শুনতে
বিছানা ছাড়ল মাহতাব। বকার
বহর শুনে মাহতাব ভাবে তার মা
এতো বকা শিখল কোথায়?
এসব বকা তো বস্তির
মায়েরাও তাদের সন্তানদেরকে
শোনায় না। কোনক্রমে হেঁটে
হেঁটে টয়লেটে যায় সে। মা এই
সময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রান্নার
কাজে। প্রাতঃকর্ম সম্পাদনা
করে পড়ার টেবিলে যায় মাহতাব।
এখন বাজে সকাল পাঁচটা,
ছয়টার মাঝেই বাসা
থেকে বের না হলে স্কুলে পৌছাতে
দেরি হয়ে যাবে। কাজেই হাতে
আর বেশি সময় নেই। এর মাঝেই কত
কাজ করার আছে। গতকালের হোমওয়ার্ক
শেষ করা হয়নি। এখন শেষ করতে
হবে? অবশ্য
মাহতাবের মনেই ছিলনা,
মা তার কাজের
ফাঁকে এসে মনে করিয়ে দিয়ে
গেছে।
পড়ার
রুমের এক কর্নারে বইয়ের বিশাল
তাক, নানান
দেশী-বিদেশি
বইয়ে ঠাসা। মাহতাব হোমওয়ার্কের
ফাঁকে ফাঁকে সেই বইয়ের তাকের
দিকে তাকায় আর দীর্ঘনিঃশ্বাস
ফেলে। এখন এই বইয়ের কোনটিতেই
ধরতে মানা। সামনের ছুটিতে
ওখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারবে।
এগুলো ছুটির সময়ের জন্য বরাদ্ধ।
মাহতাবের মনে হয় বইয়ের আলমারি
থেকে তোপসে তাকে ডাকছে।
মাহতাব
যেন দশভূজা। বইয়ের ব্যাগ মা
গোছালেও স্কুলের পোশাকটা
তাকেই পড়তে হয়। এর ফাঁকে ফাঁকে
পাউরুটি কলাতেও কামড় দিতে
হয়, জুসের
গ্লাস থেকে দুই এক চুমুক জুস
মুখে দিতে হয়,
আবার টেবিলে রাখা
নোটগুলোতেও চোখ রাখতে হয় (আজ
আবার সমাজ বিজ্ঞানের দ্বিতীয়
অধ্যায়ের উপর কুইজ টেস্ট),
খাওয়া শেষ হলে
চুলে চিরুনিও চালাতে হয়। এদিকে
মাও রেডি হচ্ছে। মাহতাবকে
একা ছাড়া হয়না। মাও সাথে সাথে
স্কুলে যায়।
সিড়ির
ধাপগুলো দৌড়িয়ে পার হতে হয়।
সময় এখন ছয়টা পাঁচ,
আজ পাঁচ মিনিট
দেরি হয়ে গেছে। বাসা থেকে
স্কুল দুই ঘন্টার রাস্তা
(সময়ের
দূরুত্ব দুই ঘন্টা,
কিন্তু পরিমাপে
খুবই অল্প)।
কয়েক ধরনের যানবাহনে এই পথটুকু
পাড়ি দিতে হয়। তাই এই তাড়া।
মা অবশ্য তার গতিতেই সিড়ি
টপকায়। কিন্তু সেও মাহতাবকে
হারিয়ে দেয় মাঝে মাঝে।তখন
বোঝা যায়না,
কে শিক্ষার্থী
আর কে অভিভাবক।
রিক্সায়
বসে কিংবা বাসে বসে যেটুকু
সময় নষ্ট হয় তাকে পুষিয়ে নেওয়ার
নতুন কায়দা শিখেছে মাহতাব,
তবে তার কৃতিত্ব
পুরোটাই মাহতাবের মায়ের।
নতুন ক্লাশে নতুন নতুন বিষয়
যুক্ত হয়েছে। যেমন ত্রিকোণমিতি,
কিংবা রসায়নের
পর্যায় সারনী। এই সব নতুন
বিষয়ের সূত্রসমূহ খাতায় তুলে
দেওয়া হয়েছে। যাত্রাপথের
অবসর!! সময়ে
এগুলোই পড়তে হয় মাহতাবকে। এ
যুগে সময় নষ্ট করার মত সময়
কোথায়?
স্কুল
চলাকালীন সময়ের পুরোটাই মা
বাইরে বসে থাকেন। পুরোপুরি
বসে থেকে সময় কাটায় বলা যায়না।
এই সময়ে মা কিছু কাজ গুছিয়ে
রাখেন। মাহতাব সপ্তাহের তিনদিন
মল্লিক স্যারের কাছে পড়তে
যায়। সেখানে দেওয়া নোটগুলি
মা এই সময়ে খাতায় কপি করেন,
এতে করে মায়ের
সময়ও কাটে আবার ফটোকপির টাকাও
বেঁচে যায়।
দুপুরে
ক্লাশ শেষ করে বাসায় আসতে আসতে
দুইটা বেজে যায়। মাহতাবের
একটি প্রিয় শখ পেপার পড়া।
বিশেষ করে পত্রিকার খেলার
পাতার সংবাদ দেখা। স্কুল থেকে
ফিরে একটু জিরিয়ে নেওয়ার নামে
বিছানায় বসে পাতাটা দেখার
চেষ্টা করে। তবে সময় পায় বড়
জোড় দশ মিনিট অর্থাৎ মায়ের
কাপড় পাল্টাতে যতক্ষণ সময়
লাগে ততক্ষণ পড়তে পারে। এরপর
প্রিয় পত্রিকা রেখে তাকে যেতে
হয় গোসল করতে। গোসল শেষ করে
বসতে হয় খাবার টেবিলে। খেতে
খেতে টিভিতে কিছু দেখার চেষ্টা
করে কিন্তু ঐ সময়ে দেখার মতো
কিছুই খুঁজে পায়না। খাবার
খেতে যদি একটু বেশি সময় লাগে
(অর্থাৎ
টিভিতে যদি চোখ একটু বেশি পড়ে
) তো
আবার বকা শুনতে হয়। কারণ আর
কিছুই না,
তিনটায় পরিমল
স্যার আসবে,
রসায়নের খুটিনাটি
জানাতে। এই পর্ব চলবে চারটা
থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
এরপর
দশ মিনিট বিরতি দিয়ে আসবে আরবি
পড়ার হুজুর। ঘন্টা খানিক
আলিফ-বা-তা
পড়িয়ে সন্ধার দিকে চলে যাবে।
পড়ার টেবিল থেকে উঠতে না উঠতে
আসবে গানের স্যার। সারে গামার
সাতটি সুর শেখাতে শেখাতে বেজে
যায় সাতটা। গানের শিক্ষক
কিছুটা খেয়ালী তাই একবার গান
শেখাতে বসলে কিছুতেই উঠতে
চায়না। কিন্তু তার এভাবে বসে
থাকলে সমস্যা হয় শামীম স্যারের।
সাতটা বাজলেই গেটে শামীম
স্যারের আওয়াজ শোনা যায়।
মাহতাব
শামীম স্যারের কাছে গণিত শিখে।
সাতটা বাজতেই হাজির হয় শামীম
স্যার গণিতের এ প্লাস বি হোল
স্কয়ার শেখাতে। গণিত শিখতে
শিখতে বেজে যায় নয়টা। স্যার
চলে গেলে খাওয়ার টেবিলে ডাক
পড়ে মাহতাবের। খাবার শেষ হতে
না হতেই বাবা চলে আসেন। খাওয়া
শেষে মাহতাবকে চলে যেতে হয়
পড়ার টেবিলে,
মা এই সময়ে টিভি
দেখতে বসে যায়,
দায়িত্ব নেয়
বাবা।
অফিস
ফেরত বাবা ফ্রেস হয়ে মাহতাবের
পড়ার খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে
ন। হোমওয়ার্ক করানো,
কুইজ টেস্টের
উত্তর খুঁজে দেওয়া,
পড়া রেডি করে
দেওয়া ইত্যাদি করতে করতে
বারোটা বেজে যায়। তবে এ বারোটা
সে বারোটা না এটি ঘড়ির সময়।
এরপর বাবা খেতে বসে গেলে মা
মাহতাবের কাছে আসেন। কোন দিন
এক ঘন্টা কোন দিন আধা ঘন্টা
পড়ে বিছানায় চলে যায় মাহতাব।
বিছানায় শোয়া মাত্রই কল্পনায়
চলে যায় খেলার মাঠে। সকালের
দেখা আংশিক খেলাটাকে শেষ করার
চেষ্টা করে।