বরাবর
আমি এক জায়গা থেকেই নেট ব্রাউজ
করি। এ কারণে গুগল আমাকে একই
জিনিস বারে বারে দেখায়। তাইতো
সার্চ ইঞ্জিন আমাকে আমার লেখার
অংশ বিশেষ দিয়ে সার্চ দিলে
কয়েকটি নির্দিষ্ট সাইটে নিয়ে
যায়। আমি বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি
ব্লগে একই লেখা একই শিরোনামে
দিয়ে থাকি। প্রায় সব কয়টি
বাংলা ব্লগে আমার আইডিও একই।
তাই আমার লেখার অংশ বিশেষ দিয়ে
সার্চ দিলে ঘুরে ফিরে একই ব্লগ
দেখতে পাই।
একদিন
বাইরে এক কম্পিউটারে সুযোগ
হলো কিছু সার্চ দেয়ার। ভাবলাম
এই পিসিতে আমার লেখা কেমন দেখা
যায় দেখি। এছাড়াও আমি শুনেছি,
যে কয়টি সাইটে
লিখি তার মাঝে এমন একটি সাইট
আছে যেখানে লিখলে আমার লেখার
লিংক গুগল দশটি ফলাফলের মাঝে
একটি হিসেবে দেখায়। কিসের
যেন SEO করা
আছে। এ কারণে আমার
লোভ
হল নিজের লেখাটিকে প্রথম দশটি
সার্চ এর ফলাফলের মাঝে একটি
হিসাবে দেখার। আর তাই আমার
লেখার একটি শিরোনাম দিয়ে সার্চ
দিলাম।
একে
একে দশটি ওয়েব সাইটের লিংক
হাজির হল আমার সামনে। আর আমি
আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম
আমি যেসাইটগুলোতে লিখি তার
প্রায় সব কয়টির লিংকই ফলাফল
হিসেবে দেখাচ্ছে। কিন্তু
এদের মাঝে একটি আমার কাছে
অপরিচিত মনে হল। লিংকটিতে
প্রবেশ করে দেখলাম আমার লেখাটাই
কপি পেস্ট করা হয়েছে। দুরুদুরু
বুকে সারাটা লেখায় চোখ বোলালাম
কিন্তু লেখাতে কিংবা তার
আশেপাশে কোথায় আমার নাম তো
দূরের কথা লেখক হিসাবে কারও
নাম নেই। ওমা!
লেখাটা কি তবে
আকাশ থেকে জমিনে পড়লো?
এই
ঘটনায় একই সাথে আনন্দিত ও
দুঃখিত দুইই হলাম,
দুঃখ পেলাম কারণ
আমার লেখা আমার অনুমতির তোয়াক্কা
না করে ছাপানো হয়েছে। আমার
আনন্দিত হলাম এই ভেবে যে,
আমার লেখাটা
হয়তো ভালো হয়েছে। তা না হলে
একটি নামি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবে
ছাপানো হতো না। ভাগ্য ভালো
যে, এখনও
কেউ লেখার দাবিদার হয়নি। আমি
সংগে সংগে মন্তব্য করলাম।
কিন্তু তা প্রকাশ করা হলো না।
আমি ফেসবুক সহ অন্যান্য স্থানে
বিষয়টি নিয়ে লিখতে শুরু করলাম।
ভালো
করে খেয়াল করে দেখলাম,
আমার লেখাটি চুরি
করে প্রকাশ করা হয়েছে আমার
অন্যান্য ব্লগে লেখা প্রকাশ
হওয়ার পর। দেখে শান্তি লাগলো।
তারা যদি আমার লেখা প্রকাশের
তারিখ অনেক আগের দিত তবে আমার
পক্ষে প্রতিবাদ করা কষ্টকর
হয়ে যেত। আমি ওই ওয়েব সাইটের
এডমিনকে ফোন দিলাম। ভাগ্য
ভালো, তাদের
যোগাযোগের ঠিকানা ওয়েবেই
ছিল। তাদেরকে ফোন দিলাম ও
বিস্তারিত লিংক দিয়ে মেইল
করে দিলাম। তারা আমার কথা শুনে
দুঃখ প্রকাশ করলো ও আমার নাম
তাদের ওয়েবে দিয়ে দিল। আমিও
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এর মধ্যে
দিয়ে আমি আমার নিজের লেখার
লেখক হিসাবে স্বীকৃতি পেলাম!
ঘটনাটিকে
কী বলা যায়? ভদ্রভাবে
বলতে গেলে চৌর্যবৃত্তি। ওয়েবের
দুনিয়ায় যা অহরহ ঘটছে। এই
ব্লগের লেখা চুরি করে ওই ব্লগে,
এর লেখা চুরি করে
সে নির্দ্বিধায় ছাপিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে চুরি করার কী দরকার???
আমি তো লেখা শেষে
একটি ছবিই দিয়ে দিচ্ছি,
যার অর্থ হল আমার
লেখা যে কেউ সংযোজন,
বিয়োজন,
পুনঃ বিতরণ করতে
পারবে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র
আমার নামটাকে রেফারেন্স হিসাবে
দিতে হবে। আর বাণিজ্যিক ভাবে
ব্যবহার করলে আমাকে তার কিছু
অংশ দিতে হবে। কিন্তু চোর
না শুনে ধর্মের কাহিনী।
ঐ
সব লেখা চোরদের জন্য একটা
ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা
যেতে পারে। যা হবে প্রযুক্তি
আদালতের মাধ্যমে। যে আদালতে
আমরা এই লেখা চুরি নিয়ে বিচার
চাইতে পারি। কিন্তু সরকারের
কাছে এই আদালত চাইতে গেলে তার
ফাইলের উপর থেকে পাথর আর সরবে
না। তাই যা করার আমাদেরই করতে
হবে।
যে
কাজটি করতে হবে তা বেশি কঠিন
কাজ না। খুবই সহজ একটি পদ্ধতি।
গাড়ি চুরি রোধ করার জন্য যেমন
আমরা একটি রেজিস্ট্রেশন
নাম্বার নেই,
তেমনই আমাদের
প্রতিটি লেখার জন্য একটি করে
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নিতে
পারি। আমরা একটি ওয়েব সাইট
তৈরি করতে পারি। সাইটে লেখকরা
তাদের লেখার জন্য একটি করে
রেজি: নাম্বার
পাবেন। এই রেজি:
নাম্বার পাওয়ার
জন্য একটি নির্দিষ্ট ফরমে
আবেদন করবেন। যেখানে লেখার
শিরোনাম, লেখার
সারকথা, কবে,
কোথায় প্রকাশ
করা হলো তা লিখে সাবমিট করবেন।
ফিরতি মেইলে একটি রেজি:
নাম্বার পাবেন।
ওয়েবে লেখার শিরোনাম,
লেখকের নাম,
সারকথা,
কবে,
কোথায় প্রকাশ
হয়েছে তা থাকবে। সঙ্গে থাকবে
একটি রেজি: নাম্বার।
শুধু মাত্র সেই লেখার রেজি:
নাম্বারের জন্য
লেখক আবেদন করবেন যা তার কাছে
গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। “আজ
আমার একটি ছাগল হারিয়েছে” এ
জাতীয় লেখার জন্য নয়।
এতে
কী হবে??? যদি
লেখক দেখেন যে,
তার লেখা চুরি
হয়ে গিয়েছে, তবে
তার একটি প্রমান দিয়ে (ওয়েবে
যেহেতু তিনি রেজি:
নাম্বার পেয়েছেন,
যা তার পক্ষে কাজ
করবে, এটাই
একটা বড় প্রমান হতে পারে)
বিভিন্ন সাইটে
বিশেষ করে ফেসবুক,
টুইটার,
ইত্যাদি সামাজিক
ওয়েবে প্রতিবাদ করতে পারবেন।
তাতে
করে কী চোরের শাস্তি দেয়া
যাবে?? না,
তা হয়তো যাবে না,
জানিনা আইন এ
ক্ষেত্রে কী বলে। কিন্তু
বিভিন্ন ব্লগে যারা এডমিন
আছেন তারা হয়তো ঐ সব ব্লগার
কে (যারা
অন্যের লেখা চুরি করছে)
ব্যান করতে পারবেন।
তাদেরকে সামাজিক ভাবে বয়কট
করা যেতে পারে। এভাবে তাদের
বয়কট করলে তা তাদের জন্য এক
প্রকারের শাস্তিই বটে। যা
আমরা নিজেরাই দিতে পারবো।
কারও জন্য (আইন
শৃঙ্খলা বাহিনী,
যাদের হাতে অনেক
কাজ) অপেক্ষা
করতে হবেনা।