তোমরা
হয়তো বিশ্বাস করবে না,
আজ আমার
হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
মতো একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের
বড় একটি ডিগ্রির সার্টিফিকেট,
কিন্তু
এই আমিও একদিন তোমাদের মতো
সকলের অবহেলার পাত্র হয়েছিলাম।
সে যে কি জ্বালা তা শুধু
ভুক্তভোগীরাই জানে। কথায় আছে
না, কি
যাতনা বিষে,
বুঝিবে
সে কিসে...
তাই
আজকের তোমার অনুভুতি আর কেউ
বুঝবে না। তুমি কি এটা ইচ্ছে
করে করেছো?
তা নিশ্চয়ই
নয়। কেউ কি চায় তার বন্ধুদের
থেকে পিছিয়ে পড়তে?
যখন
বন্ধুরা নতুন কলেজে ভর্তি
হয়ে নানান কথা বলতে বলতে তোমার
সামনে দিয়ে যাবে তখন কি তোমার
খারাপ লাগবে না?
আমি তো
মনে করি তখন তোমার বাবা-মায়ের
চেয়ে তোমারই খারাপ লাগবে বেশি।
বাংলায়
একটি কথা আছে না-কাটা
ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া;
তেমনই
দেখবে আজ তোমার জ্বালাকে
বাড়িয়ে দিতে আশেপাশের সব
আত্মীয় স্বজন তোমার কাছে চলে
এসেছে। যারা এতদিন তোমাকে
পড়া নিয়ে কোন সাহায্য করে নি
তারাই কত কথা বলে। কত নিয়ম
কানুন বের করে,
আজ তারাই
তোমার নামে নানান দুর্নাম
নিয়ে আসবে,
তুমি
কখনও যে কাজ কর নাই,
তার কথাও
বলে দিচ্ছে। তারা আজ শার্লক
হোমসের মতো বলবে,
তোমাকে
নাকি পরীক্ষার কয়েক সপ্তাহ
আগে সাইবার ক্যাফেতে দেখেছে।
এখন
এসব কথায় কান দিও না। এখন যারাই
যা বলে বলুক,
মুখে আঠা
লাগিয়ে বসে থাকতে হবে। কারও
কথার জবাব দেওয়া যাবেনা। হ্যাঁ
জবাব দিবে,
তবে এখন
না, আগামী
বছর পরীক্ষার ফল দিয়ে তাদের
বুঝিয়ে দিতে হবে তুমি ফেলনা
নও।
তুমি
হয়তো জান না,
আজ থেকে
তোমার জন্য অনেক কিছু নিষিদ্ধ
হয়ে যাবে,
যেমন
টিভি দেখা,
গান শোনা,
কম্পিউটারে
মুভি দেখা,
কিংবা
ক্রিকেট খেলা। তুমি চুপচাপ
মেনে নাও। জান তো এই সব নিষেধাজ্ঞা
খুব বেশি দিনের জন্য নয়। কয়েক
সপ্তাহের জন্য মেনে নাও,
দেখবে
সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাই
বলে এখনই পড়তে বসে যেও না,
তোমার
হয়তো জিদ চলে আসবে সামনে এগিয়ে
যাওয়ার,
কিন্তু
তাই বলে এখনই উচিত হবে না পড়তে
বসার। এখন যা করার দরকার তা
হলো নিজেকে একটু মুক্তি দেওয়ার,
যদি সময়
ও সুযোগ মিলে তবে কয়েকদিনের
জন্য ঘুরে আসতে পার পরিচিত
গন্ডির বাইরে থেকে। আর এই সময়ে
উচিত হবে না টিভি দেখতে বসার।
তুমি হয়তো জান না,
দেশে
শুধুমাত্র ছাত্রীরাই পরীক্ষা
দেয় ও তাদের ফলাফল ভাল হয়। যদি
না জান তবে টিভি দেখতে পার।
দেখবে খবর জুড়ে শুধুমাত্র
ছাত্রীদের দেখানো হচ্ছে,
যেন
ছাত্রীরাই পরীক্ষা দিয়েছে,
আর তারাই
পাশ করেছে ও ভাল রেজাল্ট করেছে।
দেশে যেন ছাত্র নাই।
কয়েকদিন
ঘুরে এসে পড়তে বস। অনেক তো হল।
পুরনো আড্ডা এবার সব বাদ দাও।
একটা বছর নিজেকে নিজে বন্দি
কর। মনে কর,
যেন তোমার
শাস্তি হয়েছে। অনেকের তো জেল
হয় তারা কি থাকতে পারে না?
তাহলে
তোমার ভবিষ্যতের জন্য তুমি
এই কষ্টটুকু করতে পারবে না।
এবার মন দাও পাঠে। দেখবে তোমার
হাতে ধরা দিবে সাফল্য। যেটা
হয়তো এবার তোমার হাত ফসকে
গিয়েছে।
আমি
জানি তুমি পারবে। তোমার সেই
স্পৃহা আছে। তুমি কি করে পারবে
সেটা আমি কি করে জানি?
জানি,
কারণ আমি
জীবনে একবার ফেল করে পরবর্তীতে
আমার বোর্ডের সর্বোচ্চ গ্রেড
পেয়েছিলাম,
তা সম্ভব
হয়েছিল আমার অদম্য স্পৃহার
কারণে। আর আমার বিশ্বাস এই
স্পৃহা সব মানুষের মাঝেই থাকে।
হয়তো কারও সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
তোমার কাজ হবে এই সুপ্ত স্পৃহাকে
জাগিয়ে তুলে সামনে এগিয়ে
যাওয়ার।