আজ
থেকে আমার ডিউটি ৭ নম্বর ওয়ার্ডে
দিন রাত এই দুই শিফটে দিলে
আমার খুব উপকার হতো।
কথাটি
শুনে উপরের দিকে তাকালাম।
টেবিলে বসে কাজ করছিলাম,
প্রস্তাবটি
শুনে কিছুটা অবাক হলাম। টেবিলের
অপর পাশে আঁখি দাঁড়ানো আছে।
মুখে ওর চিন্তার সুস্পষ্ট
ছাপ। বললাম,
সবাই
চায় ডিউটি কমাতে আর আপনি বাড়াতে
বলছেন?
আঁখি
একটু মিষ্টি করে হেসে বলল,
ঐ
বেডের রোগী আমার আত্মীয়।
আমি
আর কিছু না বলে তার ডিউটি বাড়িয়ে
রোস্টার ঠিক করলাম। এতবছর
চাকুরী করে দেখেছি সবাই কেমন
করে কাজে ফাঁকি দিতে চায়। আজ
প্রথম দেখলাম কেউ ইচ্ছে করে
তার কাজের ডিউটি বাড়িয়ে নিতে
চাইছে।
আঁখির
বয়স আর কতই বা,
কুড়ি
পেরিয়ে গেছে,
ওর
সাথে সামান্য পরিচয় আছে। তাতে
যা জেনেছি,
তার
আত্মীয় স্বজন কেউ নেই। বিয়ে
হয়েছিল কিন্তু কি একটা গোলমাল
ছিল। আমি আর জানতে চাইনি কি
গণ্ডগোল। আজ কৌতূহল হল,
বেডের
রোগী তাহলে তার কি হয়?
খোঁজ
নিয়ে জানলাম সাত নং কেবিনে
যাকে ভর্তি করা হয়েছে সে একজন
ট্রাক ড্রাইভার। ট্রাক
এক্সিডেন্টের পর তার হেলপার
এখানে এনে ভর্তি করেছে।
ঐদিন
ডিউটি করে রাতে ফেরার পর ভালো
করে ঘুমাতে পারিনি। চোখের
সামনে ভেসে উঠেছে ড্রাইভারটির
বীভৎস চেহেরা। এখন ওর চিকিৎসার
চেয়ে সেবাই বেশি দরকার। কিন্তু
বাঁচবে কিনা সন্দেহ।
পরদিন
যথারীতি নয়টায় অফিসে আসলাম।
সবাই হয়ত আসেনি,
নানান
অজুহাতে দেরী করে না আসলে এদের
বুঝি প্রেস্টিজে লাগে। এদের
ব্যাপারে আমি শুধু অভিযোগ
জানাতেই পারি এর চেয়ে বেশি
কিছু না। অবশ্য অভিযোগ দিলে
এদের কোপানলে পড়তে হবে। তাই
চুপ করে থাকাই ভাল।
কাজ
শেষ করে দুপুরের খাবার খেয়ে
বিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাৎ মনে
পড়ল ঐ রোগীর কথা। পিয়নকে পাঠিয়ে
আঁখিকে ডাকালাম। কেবিনের
রোগীর বিষয়ে অনেক কৌতূহল জমে
আছে।
টেবিল
থেকে একটি জার্নাল হাতে নিয়ে
পড়ছি এমন সময়ে আঁখি এল। মুখটা
কান্না কান্না। বললাম রোগী
কেমন আছে। সে কান্না জড়ানো
কণ্ঠে বলল,
বাঁচবে
কিনা সন্দেহ,
প্রচুর
রক্ত ক্ষরণ হয়েছে।
বললাম,
একটা
কথা জানতে কৌতূহল হচ্ছে।
আঁখি
আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে
বলল,
কি
বলবেন আমি জানি। আচ্ছা তাহলে
সব বলে আপনার কৌতূহল মেটাচ্ছি--
যখন
আমার বয়স চার বছর তখন আমার
বাবা মারা গেলেন। আমাদের
পরিবারের অবস্থা তেমন ভাল
ছিল না। মা আমাকে নিয়ে তার
বাবার বাড়ি চলে এলেন। নানী
একা মানুষ,
সামান্য
যা আয় করেন তাতেই তার চলে যেত।
আমরা আসায় অসুবিধায় পড়ে গেল।
সমস্যার সমাধান করল আমার মা,
ভালো
ছেলে পেয়ে আবারও বিয়ে করে
আমাকে রেখে চলে গেল। আমি রয়ে
গেলাম নানীর কাছে।
নানী
কাজ করত বিআরডিবির হোস্টেলে।
৪০-৫০
জনের রান্না করতে হত তাকে।
আমার জন্য নানীর কাজে আসতে
অসুবিধা। বিষয়টি জানার পর
হোস্টেল সুপার নানীকে বলল,
আমাকে
নিয়েই আসতে,
হোস্টেল
কম্পাউন্ডে একটা পরিত্যাক্ত
ঘর আছে ওটাতেই থাকার ব্যবস্থা
করলেন।
নানীর
সাথে চলে এলাম বিআরডিবির
হোস্টেলে। এখানে সবাই আমাক
আদর করত বিশেষ করে হোস্টেল
সুপার অনেক বেশি আদর করে।
মা-বাবা
না থাকায় হয়ত সবাই এত বেশি আদর
করত।
এসব
আমি জানতে পারি অনেক পরে। এর
মাঝে হোস্টেলে কাটিয়েছি কয়েক
বছর। তখন আমি বেশ কিছুটা বড়
হয়ে গেছি। সেই সাথে মেয়েদের
চিরায়িত শত্রু,
তাদের
চেহেরা,
সেটাও
বিকশিত হয়েছে সূর্যের আলোর
মত।
এটা
টের পেতাম যখন স্কুলে যেতাম
তখন। আশেপাশের সবাই কাজ বাদ
দিয়ে আমাকেই দেখত। প্রতিদিন
প্রায় একমাইল হেঁটে স্কুলে
যেতে হতো। একদিন স্কুলে যাচ্ছি
পেছন থেকে কে যেন নাম ধরে ডাক
দিল। রাস্তায় কত ছেলেই তো থাকে
মেয়েদের বিরক্ত করার জন্য।
তাই আমার উচিত ছিল পেছন দিকে
না দেখে চলে যাওয়া। কিন্তু
সেই ডাকে কি যেন এক যাদু ছিল,
সেই
যাদুতে পেছন ফিরে তাকাতে বাধ্য
হলাম।
দেখলাম
একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে। কাছে
গিয়ে বললাম,
জ্বি
বলুন কি বলবেন। সে একটি খাতা
দেখিয়ে বলল,
রাস্তায়
আপনার অজান্তে পড়ে গিয়েছিল।
আমি
দেখলাম জরুরী খাতা হয়ত বইয়ের
ভেতর থেকে পড়ে গিয়ে থাকবে।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম,
কি
করে আমার নাম ধরে ডাকল। খাতার
উপরে বড় বড় করে আমার নাম লেখা।
খাতাটি নিয়ে তাকে ধন্যবাদ
দিয়ে স্কুলে গেলাম।
হয়ত
সেই সূচনা,
তখন
কি আর জানতাম ছেলেরা এমন হয়?
এই
ঘটনার পর প্রায় প্রতিদিনই
বাবুর সাথে আমার দেখা হতো।
ছেলেটির নাম ছিল বাবু। কখনও
স্কুলে যেতে আবার কখনও স্কুল
হতে আসার সময় তার সাথে দেখা
হত।
এই
পর্যন্ত বলে আঁখি থামলো।
তার
থেমে যাওয়া দেখে বললাম,
থেমে
গেলেন যে?
ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে বলল,
৫
টা বাজে,
ওষুধ
খাওয়াতে হবে। আর ওদিকে আপনার
বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
আজ আর না। আঁখি উঠে গেল আর আমিও
সব গুছিয়ে বাড়ি চলে এলাম।
পরদিন
কাজে গিয়ে পুরো সকাল কাটলো
নানান কাজে। আঁখির কথা খেয়ালই
ছিল না।
এভাবে
সকাল গড়িয়ে দুপুর এলো। বিশ্রাম
নিচ্ছি,
এই
সময়ে দরজায় টোকা দিয়ে আঁখি
এলো।
তাকে
বললাম,
রোগী
কেমন আছে?
যতদুর
শুনেছি রোগী মাথায় আঘাত পেয়েছে।
বুঝতে পারছি ডাক্তারের হাতে
আর কিছু করার নেই। বুঝতে পারছি
আর বেশি সময় হয়ত টিকবে না।
কিন্তু কারও কাছে প্রকাশ
করিনি,
পাছে
আঁখি ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু ও
একজন নার্স সেও বুঝে রোগীর
কি অবস্থা।
আঁখি
অনেকটা সামলে নিয়েছে। বলল,
সে
আগের মতোই আছে। এরপর অনুমতি
নিয়ে আবার শুরু করলো তার না
বলা কাহিনী--
সেদিন
যে ছেলেটির কথা বলেছিলাম নাম
বাবু সে ঐ রোগী আর আমার স্বামী।
এইটুকু বলে একটু থামলো। মনে
হল আমার ধাক্কা খাওয়াটাকে
সামলে নিতে সময় দিল।
বাবুর
সাথে প্রায় প্রতিদিনই আমার
দেখা হতো। তবুও যেদিন দেখা
না হতো সেদিন আমার খুবই খারাপ
লাগতো। এভাবেই চলছিল,
একদিন
স্কুলে যাওয়ার পথে বাবু আমার
হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিল।
তাতে লেখা-
প্রিয়তমা,
জানিনা
কখন তোমাকে এই মনটি দিয়েছি
এখন কৃপা করে তা গ্রহণ কর।
নইলে মরণ ছাড়া গতি থাকবে না।
কয়েকটি
মাত্র লাইন। কিন্তু কি তার
মাধুর্য। আমার ১৫ বছরের জীবনে
কেউ এভাবে প্রেম নিবেদন করেনি,
বয়সটা
ছিল অল্প। চোখে তখন রঙ্গীন
চশমা। তাই যা দেখতাম তাই ভালো
লাগতো। ভালো-মন্দ
বিচার করার কোন বুদ্ধিই তখন
ছিল না। তাইতো তার আহ্বানে
না করতে পারিনি।
এরপরের
দিনগুলো দ্রুত ফুরিয়ে যেতে
লাগল। মনে হতে লাগলো দিনগুলো
এত ছোট কেন। আরো বড় হলে কি
এমন ক্ষতি হতো। এমনি করে এসএসসি
পরীক্ষার সময় চলে এলো।
পরীক্ষা
ভালো হলো। শুরু হল ফল লাভের
প্রতীক্ষা। জানতাম ফল বের
হতে দুইতিন মাস দেরি হবে। তাই
এই কটা দিন নষ্ট না করে চুটিয়ে
প্রেম করা শুরু করলাম।
বাবুর
সব কাজই আমার ভালো লাগত। সে
যখন গলা ছেড়ে গান ধরত আমার মনে
হতো কোন বিখ্যাত শিল্পীর মুখে
গান শুনছি। আবার যখন কোলের
উপর মাথা রাখত আর আমি তার চুলে
হাত বুলিয়ে দিতাম তখন কত কথাই
না মনে হতো। মনে হত আকাশ কেন
এত নীল হয় অথবা সাগর কেন এতো
গভীর?
কিন্তু
বাবু কি করে,
কি
তার বংশ পরিচয় কিছুই জানার
ইচ্ছে মনে আসতো না।
অলস
মস্তিস্ক নাকি শয়তানের কারখানা।
কথাটা একদমই খাঁটি। আগে যেখানে
সপ্তাহে একবার দেখা হতো
সেখানে ফল লাভের অবসরে প্রতিদিনই
দেখা হতে লাগলো।
একদিন
সন্ধের কিছু পর দেখি বাগানে
কে যেন বসে আছে। আমি আস্তে করে
বললাম কে ঐখানে?
তখন
লোকটি অন্ধকার থেকে বের হয়ে
সামনে এলে চিনতে পারলাম বাবুকে।
তারপর তাকে নিয়ে হোস্টেলের
একটি রুমে চলে এলাম। তখন কোন
প্রশিক্ষণ চলছিল না,
সব
রুমই ফাঁকা।
ঘরে
বসে নানান রাজ্যের গল্প শুরু
করলাম। আমরা পরস্পর এত কাছাকাছি
থাকা স্বত্ত্বেও আমাদের মাঝে
দূরুত্ব ছিল যথেষ্ট।
কিন্তু
বাদ সাধল অফিসের দারোয়ান।
সন্ধের
পর চারদিকটা ভালো করে দেখা
খোঁজ নেওয়া তার দীর্ঘদিনের
অভ্যাস। সে দিনও চারিদিকে
খোঁজ নিচ্ছিল,
আমাদের
রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়
হঠাৎ হাসির শব্দে থমকে দাঁড়ায়।
দরজাটা ভেজানো ছিল একটু ঠেলতেই
খুলো গেল। দারোয়ান এসে ঢুকল
আমাদের ঘরটাতে। ঘরে আমাদের
দুইজনকে দেখতে পেয়ে হইচই শুরু
করে দিল। এই হইচইয়ের শব্দে
সারা পাড়া আলোড়িত হয়ে গেল।
এমন ঘটনা নাকি অনেক দিন এই
এলাকায় ঘটেনি।
বাবুকে
সেই ঘরে আটকিয়ে রেখে আমাকে
নিয়ে গেল সুপার আপার ঘরে সেখান
থেকে বাবুর বাবা-মাকে
খবর পাঠানো হয়েছে। তার যে কোন
সময় চলে আসতে পারে। নানী একপাশে
হাত কাচুমাচু করে এমনভাবে
বসে আছে দেখলে মনে আমি না সেই
অপরাধ করেছে। আমার যে কোন
শাস্তি হোক মেনে নেব,
কিন্তু
নানীর জন্য বড় দুঃখ লাগল। তার
এই চাকরীই সম্বল। এটা চলে গেলে
তার এই বয়সে না খেয়ে থাকতে
হবে।
বিশটি
মিনিট যে কিভাবে চলে গেল তার
আর বলতে পারবো না। বিশ মিনিট
পর বাবুর বাবা আসলো। এই প্রথম
তাকে দেখলাম। ছেলের চেহেরা
যতটা ভালো,
তার
বাবার চেহেরা ততটাই ভয়ঙ্কর।
কুৎসিত কালো মুখে খোঁচা খোঁচা
দাড়ি। মাথার সামনের অংশে চুল
নেই বললেই চলে। লম্বায় ৫ ফুট
৫ ইঞ্চি হবে বোধহয়। মোটা কাটা
শরীর,
সিগারেট
খেতে ঠোট কালো করে ফেলেছে।
গর্তে বসে যাওয়া চোখটি তাকে
আরও ভয়ার্ত করে তুলেছে।
বিআরডিবির
হোস্টেলে এসেই বাবুর বাবা
মজিবর শোরগোল শুরু করে দিল।
প্রথমে ভেবেছিল অন্যায় ভাবে
তার ছেলেকে কোন কারণে এখানে
আটকিয়ে রেখেছে। এরপর যখন সুপার
আপা পুরো ঘটনা বিস্তারিত বলল
তখন তিনি দুই মিনিট চুপ করে
থাকলো। এক সময় নিরবতা ভেঙ্গে
বলতে লাগল,
ম্যাডাম,
এই
ঘটনার যেহেতু একপক্ষ আমার
ছেলে তাই আমি মেয়েটিকে আমার
ছেলের সাথেই বিয়ে দেব। আপনার
কোন আপত্তি আছে?
ভেবেছিলাম
আমার ভাগ্যে কি না কি আছে?
ঘটনা
কিছুই না। কিন্তু রং ছড়িয়েছে
অনেক। বাবুর বাবার চেহেরা
যেমন কুৎসিত তার মনটা তেমনই
অসাধারণ ভালো। এই ঘটনায় অনেক
লোক জড় হয়েছিল। তাদের একদল
ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল। তারা
হয়ত ভেবেছিল আহা,
চমৎকার
একটা ঘটনা দেখা থেকে বিরত
থাকতে হলো। আরেক দল ছিল তারা
বলল,
যাক
মেয়েটির একটা গতি হলো।
যাক
সে কথা। এক সময় আমার ও বাবুর
বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দিনই
জানতে পারলাম বাবুর বাবা দুইটি
বিয়ে করেছে। তারা এই বাড়িতেই
থাকে। তাদের সাথে পরিচিত হলাম।
দুইজন বাড়ির বউতো নয়,
যেন
দুই রানী। আর তারা সমান দাপটেই
শাসন পরিচালনা করে। বুঝতেই
পারছেন,
এক
নৌকায় যদি দুইজন দিক নির্দেশ
দেয় তাহলে নৌকা কেমন চলে।
মুদ্রা
যখন কোন কিছুর উপর পড় থাকে তখন
এর এক পিঠ দেখা যায়। কিন্তু
হাতে নিয়ে দেখতে গেলে দুই পিঠ
দেখা যায়। দুই পিঠ দুই রকম।
বাবু
ছিল পড়ে থাকা মুদ্রা। তাই তার
একদিক দেখতে পেতাম,
এখানে
এসে দেখি তার আরও রূপ আছে। আগে
যা জানতাম না এখন এসে তাই
জানলাম। যে বৎসর নকলের খুব
ছড়াছড়ি সেই বছর সে কোন রকমে
এসএসসি পাশ করেছে। তারপর তাকে
আর কোন পাঠশালায় দেখা যায়নি।
আরও জানলাম বাবুর নেশা করার
অভ্যাস আছে। বিয়ের একমাস পর
থেকে সে রাত করে ফেরা শুরু
করল। এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে
আমার উপর ক্ষেপে যেত। এমনকি
গায়ে হাতও তুলত।
সে
আমার উপর অনেক ভাবে নির্যাতন
করত। বলতো নানীর কাছ থেকে টাকা
নিয়ে আসতে। কি না কি ব্যবসা
করবে। নানী টাকা পাবে কোথায়।
তাই তার নির্যাতন সহ্য করতাম
নীরবে। ভাবতেন কি করে এত
নির্যাতন সহ্য করতাম?
করতাম
কারণ মেয়েরা যাকে ভালবাসে
তাকে মনের গভীর থেকেই ভালোবাসে।
মনের গভীরে স্থান দেয়। তাই
তার নির্যাতনও সয়ে যায়।
দিন
যত যেতে লাগল তার অত্যাচারও
ততো বাড়তে লাগলো। তবুও সহ্য
করে যেতাম। তার অবশ্য আরও একটা
কারণ আছে। ততদিনে বুঝতে
পেরেছিলাম আমার শরীরে আরেকটি
শরীরের অস্তিত্ব। এ কথা জানার
পর নির্যাতনের মাত্রা কমে
যায়।
আমার
শ্বশুর ছেলেকে কিছুই বলত না,
একমাত্র
ছেলে। উল্টো আমাকেই বকাঝকা
দিতো। তাইতো কারও কাছে নালিশ
করিনি।
ধীরে
ধীরে নারী জন্মের স্বার্থক
দিনটি এসে উপস্থিত হল। এক সময়
নানী খবর পেয়ে তার কাছে নিয়ে
এলো। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।
মৃত সন্তানের মা হলাম। এতে
আমার দোষ কি?
কিন্তু
তার শাস্তি আমাকেই পোহাতে
হলো।
শারীরিকভাবে
দূর্বল ছিলাম,
বাবুর
একটি চিঠিতে মানসিকভাবে দূর্বল
হয়ে পড়লাম,
সে
জানালো তার পক্ষে আর এই সংসার
করা সম্ভব না। আমাকে তার কথা
ভুলে যেতে হবে। তার স্মৃতি
ভুলে যেতে হবে।
দুমাস
পর খবর পেলাম বাবু আবার বিয়ে
করেছে। এবার নাকি যৌতুক নিয়ে।
এদিকে নানী আমাকে তার কাছে
রাখতে চাইলেন না। অগত্যা আশ্রয়
খুঁজতে বের হলাম।
বিআরডিবিতে
থাকার সময় সেখানকার এক বড়
অফিসারের সাথে ভাল একটা সম্পর্ক
হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। তার
আমার বয়সী একটা মেয়ে ছিল। মারা
যায় মেয়েটি,
আমাকে
দেখলে নাকি তার মৃত মেয়ের কথা
মনে পড়ত,
আমাকে
মেয়ের মতো ভালবাসতেন।
সব
শুনে সে আমাক নার্সিং এ ভর্তি
করায়। তারপর নানান বাঁক ঘুরে
আজ আমি এখানে। আমার জায়গায়
অন্য কেউ হলে হয়ত বাবুকে ঘৃণা
করতো।
কিন্তু
আমি..
আঁখির
কথা শেষ হলো না। একজন নার্স
দৌড়ে এসে বলল ৭ নং বেডের রোগীর
অবস্থা খুব খারাপ। এ কথা শুনে
আঁখি সাথে সাথে কেবিনের দিকে
চলে গেল। আমিও তার পিছু নিলাম।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি।
নিথর দেহ সামনে নিয়ে পাথর হয়ে
বসে আছে। আমার সারা পেয়ে আমার
দিকে তাকালো। দেখলাম আঁখির
দুই চোখ বেয়ে নিরবে বয়ে যাচ্ছে
জলের ধারা।।
টাংগাইল
২০-০৩-২০০৩
(কয়েকদিন
আগে পুরনো খাতাটা খুঁজে পাওয়ায়
লেখাটা খুঁজে পেলাম। ভাবলাম
ডিজিটাল একটা রূপ দিয়ে সংরক্ষণ
করে রাখি,
তাই
এখানে প্রকাশ করলাম।)