ছোটবেলায় একজনের সাথে দেখা হয়েছিল, সেটাই তার সাথে প্রথম সাক্ষাত। আমাকে দেখে বলেছিল আমি নাকি স্মার্ট না। কি জ্বালা, এখন স্মার্ট হই কি করে? বললাম, কেন স্মার্ট নই, বলল, নিজের দিকে চেয়ে দেখ। অনুসন্ধিত্সু দৃষ্টিতে তাকালাম, কিছুই খুঁজে পাইনা। অতঃপর সেই আমাকে বোঝালো আমি কেন স্মার্ট না। আমি যে পোশাক পড়ে তার সাথে দেখা করতে এসেছি তা একেবারেই আনস্মার্ট একটা পোষাক।
আমি বরাবর নিজের জন্য যেটা আরামদায়ক সেই পোশাকই পড়তে চেষ্টা করি। সেদিনও বরাবরের মতো নরমাল প্যান্ট, চামড়ার সেন্ডেল আর শার্ট পড়েছিলাম। সে বলল, এই পোশাকের বদলে যদি একটা সু, শার্ট প্যান্ট ইন করে পড়তাম তাহলে আমি হয়ে যেতাম স্মার্ট।
আমি বরাবর নিজের জন্য যেটা আরামদায়ক সেই পোশাকই পড়তে চেষ্টা করি। সেদিনও বরাবরের মতো নরমাল প্যান্ট, চামড়ার সেন্ডেল আর শার্ট পড়েছিলাম। সে বলল, এই পোশাকের বদলে যদি একটা সু, শার্ট প্যান্ট ইন করে পড়তাম তাহলে আমি হয়ে যেতাম স্মার্ট।
তখন আমার শেখ সাদীর পোশাক নিয়ে বিড়ম্বনার কথা মনে পড়লো। এতযুগ পরও সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এইতো কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ব্রিটিশরা শাসন করতো। তারা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু তাদের পোশাক ঠিকই রেখে যেতে পেরেছে। ওটা পড়েই এখন আমরা ধন্য। সু পড়ে শার্ট প্যান্ট ইন না করলে আপনি অনেক অফিসেই ঢুকতে পারবেন না। মনে আছে, বন্ধুর বড় ভাই পড়ত ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার সাথে যখন দেখা করতে যেতাম তখন ঐ বিল্ডিংয়ে ঢুকতে পারতাম না, বেশিরভাগ দিন আমি ভার্সিটিতে যেতাম চামড়ার সেন্ডেল পড়ে (আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চামড়ার সেন্ডেল আর টিশার্ট বা হাফহাতা শার্ট পড়েই ক্লাস করতো)। তাইতো হুট করে চলে যাওয়ায় ঐ ভবনে আর যাওয়া হয় না।
এ এক বিড়ম্বনাই। একেক জায়গায় একেক পোশাক। বাসায় থাকলে ট্রাউজার, লুঙ্গি পড়া যায়, তবে সেটা পড়ে আবার বাইরে যাওয়া যায় না। বাজারে গেলে নরমাল পোশাকেই মানায় আবার বড় বড় শপিং মলে গেলে সবাই চায় একটু ফরমাল হতে।
আবার যখন বিয়ে বাড়িতে যায় বিশেষ করে গায়ে হলুদে তখন পাঞ্জাবী পড়ে। ধরেন সকালে বাজার করে দিয়ে আপনাকে ছুটতে হবে অফিসের মিটিং ধরতে সেখান থেকে ছোট শালির গায়ে হলুদ। তো আপনাকে কি করতে হবে? সকালে বাজারে যেতে আপনাকে পড়তে হবে নরমাল কাপড় (বেশি দামি পোশাক দেখলে মাছের দোকানদার দাম বেশি চায়, এটা অনেকবার দেখেছি), সেখান থেকে এসে আবার ফরমাল ড্রেস পড়ে যেতে হবে মিটিং এ, মিটিং শেষ হলে বাসায় এসে আবার পাঞ্জাবী পড়ে গায়ে হলুদ (ছোট শালির গায়ে হলুদ বলে কথা)। এই যে একেক জায়গায় আপনাকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আপনার কি পোশাক হবে, তার সবটাই কি আমাদের জাতীয় পোশাক? না আমরা ধার করে এগুলো কারও কারও কাছ থেকে নিয়েছি?
মনে পড়ে, যখন গ্রামে স্কুল ভিজিটে যেতাম তখন আমাদের অফিস থেকে বলে দিত একটু ফরমাল হয়ে যেতে। কিন্তু বৃষ্টিতে ঐ সব গ্রামের অবস্থা এমন হতো যে পায়ের জুতো খুলে হাতে নিয়ে হাঁটু পানি পাড় হয়ে যেতে হতো। সেখানে ফরমাল ড্রেস কে নির্ধারণ করবে? যারা শার্ট প্যান্ট ইন করে সু জুতো পড়ার চল এনে দিয়েছিল তারা তাদের দেশে এই রকম রাস্তায় চলাচল করে কি?
তাই মাঝে মাঝে ভাবনা হয় এই সময়ে এসেও আমরা পোশাকে স্বাধীন হতে পেরেছি কি?
তবে মেয়েদের বেলায় একটু ভিন্নতা আছে। তারা সালোয়ার-কামিজ, কিংবা শাড়ি অথবা অনেকে বোরখা পড়ে, তা যাই পড়ুক না কেন একই পোশাকে তারা যেকোন পরিবেশেই যেতে পারেন, তা সেটা অফিসের মিটিংই হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি।