খামার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ছদ্ম নাম) মাত্র একজন
শিক্ষক পরিচালনা করেন। নতুন স্থাপিত ১৫০০ বিদ্যালয়ের এটি একটি। যিনি বিদ্যালয়টি পরিচালনা
করেন তিনিও আরেক স্কুল থেকে ডেপুটেশনে এসেছেন। তার মূল দায়িত্ব যে বিদ্যালয়ে সেখানে
শিক্ষক ছিলেন চারজন। সেখান থেকে তিনি চলে আসায় ঐ বিদ্যালয়েও শিক্ষক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
এরই মাঝে শুরু হয়েছে সাবজেক্ট বেইজড প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ একজন
শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ এমন একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া
যার মাধ্যমে ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত
হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই যে কোন ব্যক্তি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ সুষ্ঠু
ও সাফল্যজনকভাবে সম্পাদনে সক্ষম হয়।
বাংলা ভাষায় প্রশিক্ষণ শব্দটি প্র উপসর্গের সঙ্গে শিক্ষ ধাতু
অন প্রত্যয়যুক্ত হয়ে গঠিত। প্র উপসর্গের অর্থ প্রকৃষ্ট বা সুষ্ঠু। শিক্ষ ধাতুর অর্থ
অধ্যয়ন বা শিক্ষাগ্রহণ করা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে তাই যে কেন কারিগরী, পেশাগত বা বিশেষ
বিষয় সম্পর্কে প্রকৃষ্টভাবে হাতে কলমে শিক্ষাগ্রহণ বা পুরোপুরি জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা
অর্জনের প্রক্রিয়াকে প্রশিক্ষণ বলে গণ্য করা হয়। (প্রশিক্ষণ কলাকৌশল, আব্দুল আজিজ চৌধুরী;
১৫-১৬)
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে এবং যুগের সাথে
তাল মিলিয়ে চলতে গেলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কিন্তু যে সব বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা
রয়েছে সেই সব বিদ্যালয়ের দিকে যদি আমরা নজর দেই তাহলে দেখতে পাই, শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণ
চলার সময়গুলোতে বিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। শিক্ষক স্বল্পতার জন্য অনেক সময়
ঠিক মতো শ্রেণিপাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হয়। এ যেন এক চক্রের মতো, শিক্ষকগণের পেশাগত
উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দরকার, আবার বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমেও শিক্ষকগণদের উপস্থিত
থাকতে হয়, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য অনেক সময় বন্ধের দিন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা
হয়। কিন্তু সারা সপ্তাহ কাজ করে একদিন ছুটি কাটাতে না পারলে পরের সপ্তাহে সফলভাবে কাজ
করা সম্ভব হয় না। যদিও কর্তব্যের খাতিরে বিদ্যালয়ে যেতে হয় কিন্তু শ্রেণি পাঠদান কতটা
সফলভাবে করা যায় তা সহজেই অনুমেয়। শ্রেণি পাঠদান একটি জটিল বিষয়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত
একঝাক শিশুর মাঝে থাকতে গেলে অনেক ঝুক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়।
হৈচৈ এর মাঝে থাকতে গিয়ে অনেক সময় স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে যায়।
আবার প্রশিক্ষণে না গিয়েও চলে না, আর যদি খোলার দিন হয় তাহলে ব্যাহত হয় শ্রেণি কার্যক্রম।
এই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে একটা উপায় অবলম্বন করা যায়। সেই উপায় হতে পারে উপজেলা রিজার্ভ
শিক্ষকের মাধ্যমে।
প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ত্রিশজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে যারা
রিজার্ভ শিক্ষকের কাজ করবে। যখন যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে যাবেন সেই বিদ্যালয়ে রিজার্ভ শিক্ষকগণ ঐ দিনের পাঠদান করাবেন। রিজার্ভ শিক্ষকগণের মাস ভিত্তিক কোন বেতন হবে না, শুধু
মাত্র যে কয়দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবে সেই কয়দিনের ভাতা হিসেবে সম্মানী পাবেন।
এই শিক্ষক নেওয়া যেতে পারে স্থানীয় উপজেলার স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থী,
অবসর নেওয়া কোন শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ইত্যাদি পেশা থেকে। মোট কথা এই শিক্ষকগণের
হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকতে হবে। যারা কোন চাকুরির সাথে জড়িত না, বলা চলে প্রায় বেকার।
নিয়োগের পরপর তাদের একটি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। কাজের সুবিধার জন্য
প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে একজন নিতে পারলে ঐ ব্যক্তির কাজ করতে সুবিধা হবে।
নিজ এলাকায় কাজ করতে পারবে।
তাদের সম্মানী প্রদান করা হবে যে কয়দিন কাজ করছেন তার ভিত্তিতে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মতো। যেদিন পাঠদান করতে হবে সেদিনের জন্য সম্মানী পাবেন। এই
ব্যয় বহন করবে যারা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে তারা। যদি সরকারি কোন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ
প্রদান করা হয় তবে, তারা ব্যয় বহন করবে। আর যদি কোন বেসরকারি সংস্থা প্রশিক্ষণের আয়োজন
করে তাহলে তার ব্যয় বহন করবে সেই সংস্থা।
প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে একটি সিডিউল করতে হবে। আগামী মাসে কে
কোন বিদ্যালয়ে সাপোর্ট দিবে তার উপর। এই সিডিউল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংশ্লিষ্ট
বিদ্যালয়ে সাপোর্ট দিবেন। প্রধান শিক্ষক তার রিপোর্টে স্বাক্ষর করবেন, সেই অনুযায়ী
উপজেলা থেকে সম্মানী প্রদান করা হবে।
এতে করে যেমন একদিকে শিক্ষকগণ চাহিদা মতো যে কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ
করে তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারবে, অন্য দিকে
শ্রেণি কার্যক্রমের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। এছাড়া যারা প্রথমবার এই ধরনের সংরক্ষিত শিক্ষক
হওয়ার সুযোগ পাবেন, তারা নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারবে। যা তাদের পরবর্তী জীবনের
পাথেয় হয়ে থাকবে।