মোবারকের হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে।
তার বুক পকেটে ক্রিয়া উন্নয়ন তহবিলের লটারির টিকেট। হাতে আজকের দৈনিক পত্রিকা। আজ লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পুরস্কার ত্রিশ লক্ষ টাকা।
মোবারক একবার ভাবল পত্রিকা খুলে নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিলেই তো হয়। সেই তো দেখা যাবে শেষের ডিজিটটি মিলেনি। হয়ত এক কম বা এক বেশি হয়েছে। যেমন হয়েছিল এসএসসির পর।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, বন্ধুরা বলল বিকেলে নাকি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করা হবে। মোবারক সেই মতো দুপুর হতেই স্কুলে চলে এল। যদিও রেজাল্ট দিবে বিকেলে।
সেকি উৎকণ্ঠা! বিকেল আর হতেই চায়না, প্রতীক্ষার প্রহর হয়ত দীর্ঘই হয়।
তারপর এক সময় এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অবশ্য মোবারকের জন্যে নয়।
ফল প্রকাশের পর জানা গেল, তার বন্ধুরা সবাই স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করেছে, মাঝখান থেকে সে ফেল করে বসে আছে। এর জন্যে বাড়িতে টেকাই দায়, উঠতে বসতে কত কথাই যে শুনতে হয় তার ইয়াত্তা নেই। অথচ এমন হওয়ার কথা না। টেবুলেশনশিট আসার পর দেখা গেল সব গণিতে পেয়েছে ডবল শূণ্য।
ব্যাপারটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুনর্মূল্যায়নের জন্যে আবেদন করা হল। কি যে এক ঝামেলার কাজ। এই কর সেই কর, আরও কত কি। এক সময় খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হলো। দেখা গেল, খাতা দেখাই হয়নি, একটি লাল দাগও নেই। এমন হওয়ার কথা নয়, তাও কিভাবে যেন হয়ে গেল। শেষে ফল একটা পাওয়া গেল কিন্তু ততো দিনে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে এক বছর বসে থাকতে হল।
একে হয়ত দূর্ঘটনা বলা যেতে পারে। কিন্তু এরপর থেকে এমন প্রায়ই হতে লাগল। বিশেষ করে কলেজ জীবনে। কলেজে পড়ার জন্যে শহরে আগমন। মনে উড়ু উড়ু ভাব। ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাশ করতে হয়। ক্লাশ করার ফাঁকে কি করে যেন জিনিয়ার দিকে নজর চলে গেল। দূর থেকে দেখেই শান্তি লাগে, এক সময় কাছে আসার সুযোগ পাওয়া গেল। এই সুযোগে মোবারক জানিয়ে দিল জিনিয়াকে সে কতটা পছন্দ করে, জিনিয়া হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে এক টুকরো হাসি উপহার দিল।
মৌনতা নাকি সম্মতির লক্ষণ, মোবারক এই মৌনতাকে ভিত্তি করে এগিয়ে যেত চাইল বহুদূর, মাঝে মাঝে এটা ওটা কিনে দিত জিনিয়াকে, রাত জেগে করা গুরুত্বপূর্ণ নোটগুলো বিনা দ্বিধায় দিয়ে দিতো জিনিয়াকে। যখন দেখা হত তখন কত স্বপ্নের কথাই যে শোনাতো, তা লিখে রাখলে হয়ত উপন্যাসই হয়ে যেত।
সে স্বপ্ন এক সময় ভেঙ্গে গেল।
মোবারক ভাবতেও পারেনি এমন হতে পারে, কিন্তু তার সাথেই এমন সব ঘটনা ঘটে। এইতো সেবার সবাই মিলে পিকনিকে যাবে বলে ট্রেনের টিকেট কাটল। অগ্রীম টিকেট কাটতে হয়েছে। সব টিকিট সিট নাম্বার দেওয়া, তারিখ দেওয়া। যে যার সিটে বসেছে। কিন্তু মোবারকের সিটে বসে আছে আরেক জন। এই নিয়ে ঝগড়া, ঝগড়ার এক পর্যায়ে কামরার অ্যাটেনডেন্স এসে দেখে বলল, মোবারকের টিকেট আরও দুই দিন পরের। ভুলক্রমে এটা হয়েছে। তাই এক সিটে দুইজন। কি আর করা, মোবারকের আর যাওয়াই হল না, তবে চাইলে যাওয়া যেত কিন্তু মন সায় দিল না।
আজ কেন যেন এমন অনেক ছোট খাট দূর্ঘটনার কথা মনে হচ্ছে।
কলেজে একদিন জিনিয়া একটি ছেলেকে নিয়ে আসলো। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর জানা গেল এই ছেলেটির সাথে জিনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে প্রায় দুই বছর হতে চললো। তবে জিনিয়া অকৃতজ্ঞ না, যাওয়ার আগে কলেজ জীবনে এত সুন্দর নোটপত্র দিয়ে সহযোগিতা করার জন্যে ধন্যবাদ দিতে ভুলেনি।
এরপর এক সময় এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হল। এরপর ফল প্রকাশের প্রতীক্ষা, দীর্ঘ এক প্রতীক্ষা। এই দীর্ঘ সময়ে সবার সাথে মোবারক একটি ভালো কোচিং এ ভর্তি হল। পড়ার অনেক চাপ, কোন দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।
এক সময় সব উৎকণ্ঠা দূর করে কোন ঝামেলা ছাড়াই এইচএসসির রেজাল্ট বের হল। সে দ্বিগুন উৎসাহে পড়াশোনা শুরু করলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন নিয়ে ফরম পূরণ করলো, নির্ধারিত দিনে অংশ নিল ভর্তি যুদ্ধে। এক সময় ভর্তি পরীক্ষার ফলও দেওয়া হল। নাহ এবার আর নিরাশ হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট আইইআর এ টিকেছে সে। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় টিকলে আবার একটি ভাইভা দিতে হয়। সে ভাইভার দিন খুব সাজসজ্জা করে সব কাগজপত্র নিয়ে হাজির হল ভাইভা বোর্ডে।
নির্দিষ্ট সময়ে তার ডাক পড়ল, দুইজন শিক্ষকের ছোট কিছু প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবেই প্রদান করল, বাদ সাধল রাগী রাগী চেহারার একজন শিক্ষক।
বিষয়টা খুব জরুরি, এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেটে নামের বানান আলাদা। Mobarok আর Mobarak। বিষয়টিতে মোবারকের কোন হাত নেই কিন্তু ঝামেলা তাকেই পোহাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সময় বেঁধে দিল দুই সপ্তাহের, এর মাঝে এই নামের বানান সংশোধন করতে পারলে হল আর না হয় ভর্তি বাতিল করা হবে।
বোর্ডে যারা গিয়েছে তারাই জানে এখানে কোন কাজের জন্য গেলে কি ঝামেলা পোহাতে হয়। একটা ফর্মে সব কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে, নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা দিয়ে তার রসিদসহ আবেদন জমা দিতে হয়। এক সপ্তাহ পরপর খবর নিতে হয় কাজের কতদূর। যদি দয়া হয় তবে কাজ হবে না হয় দেরি হবে।
মোবারকের এখন কাজ একটাই, বোর্ডে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া। কিন্তু পরিচিত কেউ না থাকায় ভেতরেও যেতে পারে না, কাউন্টার থেকে খোঁজ নিয়ে আসতে হয়, কাগজ এসেছে কিনা।
কাগজ আর আসে না। এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ পার হলো। কাগজ আর এল না। মোবারক হতাশ হয়ে বাড়ি চলে গেল। ঢাকায় আর ভর্তি হওয়া হলো না। দুই সপ্তাহের সময় শেষ, কোন মুখে যাবে ওদিকে। বোকামিটা হয়ত এখানেই করলো। ও যদি ভালোমতো খোঁজখবর নিতো তাহলে বাঁকা পথে কাগজ যোগাড় করতে পারতো, কিছু টাকা হয়ত বেশি লাগতো অথবা যদি আইইআরে আবেদন করতো তাহলে হয়ত কাগজ দেখানোর জন্য আরো সময় পেত। হতাশ হয়ে আর কোন কিছু না করে বাড়ি চলে এল।
ভর্তি হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাড়ির কাছের কলেজে। সেখান থেকে পাশ করলো অনার্স মাস্টার্স। না এবার কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কোন রকম অঘটন ছাড়াই পাশ করে বের হতে পারলো।
পাশ তো করল, চাকরী? সেটা কে দিবে। একের পর এক ইন্টারভিউ দিতে লাগল, কোথায় কিছু হয় না। প্রশ্ন কর্তা যেন বসেই থাকে আটকানোর জন্য। কত জটিল করে প্রশ্ন করা যায় না শুনলে বোঝাই যেত না। আরেকটি বিষয় হলো পছন্দনীয় উত্তর। একটা প্রশ্নের কয়েকটি উত্তর হতে পারে, যদি প্রশ্ন কর্তার মন মতো না হয় তাহলেই গেল। আবার ভালো পরীক্ষা দিয়েও দেখেছে কাজ হয়নি, এইসব গুলোতে আগেই ঠিক করা থাকে কাকে নিবে।
চাকরী খুঁজতে খুঁজতে বয়সই শেষ হয়ে গেল। এমনিতেই ছোট বেলাতেই পড়ায় পিছিয়ে গেছে। কি আর করার। শেষে বাড়িতে গিয়ে মুরগীর ফার্ম দিল। একটা কিছু তো করতে হবে। কিছু সঞ্চয় ছিল তাই দিয়ে শুরু করেছিল। বেশ বড়ই হয়েছিল। ভালই চলছিল। কি এক মোড়ক লাগায় সেটাও চলল না। সব মুরগী একদিনেই শেষ।
আজ সব কথাই চোখের সামনে ভেসে আসছে। পকেটে থাকা টিকিটটা কতবার যে হাত দিয়ে অনুভব করল তার ঠিক নেই। হাতে ধরা পত্রিকাটাও খোলা হয়নি। কি এক অদ্ভুদ শখ চেপেছে মাথায়। হাঁটতে হাঁটতে সে চলে গেল এলাকার বড় এতিমখানায়। আজ তার ভাগ্য পরীক্ষা করবে। দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে।
এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক সব শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলো। এমন প্রস্তাব কেউ কখনও দেয়নি। সামনে বসে থাকা লোকটার কথায় কি যেন আছে। তাই অদ্ভুদ হলেও প্রস্তাবটি মেনে নিল। এর সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে।
প্রস্তাবটা অদ্ভুতই বলা চলে। মোবারক চলে আসার পর লটারীর টিকিটটা পত্রিকার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। যদি মিলে যায় তবে সব টাকা এতিমখানার আর না মিললে নিচে জানালা দিয়ে টিকিটটা ফেলতে হবে। মোবারক নিচেই অপেক্ষা করবে।
মোবারক অনেকক্ষণ হল নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তার খুব টেনশন হচ্ছে। লটারির ফলাফল কি হয় না হয় সেটা ভেবে। একটা নম্বর মিলিয়ে দেখতে এত দেরি হওয়ার কথা না। চলে আসবে নাকি অপেক্ষা করবে ভাবতে ভাবতে উপরে সমস্বরে আনন্দ প্রকাশের শব্দ শুনতে পেলো। এরপর আর অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন মনে করল না।।
তার বুক পকেটে ক্রিয়া উন্নয়ন তহবিলের লটারির টিকেট। হাতে আজকের দৈনিক পত্রিকা। আজ লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পুরস্কার ত্রিশ লক্ষ টাকা।
মোবারক একবার ভাবল পত্রিকা খুলে নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিলেই তো হয়। সেই তো দেখা যাবে শেষের ডিজিটটি মিলেনি। হয়ত এক কম বা এক বেশি হয়েছে। যেমন হয়েছিল এসএসসির পর।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, বন্ধুরা বলল বিকেলে নাকি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করা হবে। মোবারক সেই মতো দুপুর হতেই স্কুলে চলে এল। যদিও রেজাল্ট দিবে বিকেলে।
সেকি উৎকণ্ঠা! বিকেল আর হতেই চায়না, প্রতীক্ষার প্রহর হয়ত দীর্ঘই হয়।
তারপর এক সময় এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অবশ্য মোবারকের জন্যে নয়।
ফল প্রকাশের পর জানা গেল, তার বন্ধুরা সবাই স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করেছে, মাঝখান থেকে সে ফেল করে বসে আছে। এর জন্যে বাড়িতে টেকাই দায়, উঠতে বসতে কত কথাই যে শুনতে হয় তার ইয়াত্তা নেই। অথচ এমন হওয়ার কথা না। টেবুলেশনশিট আসার পর দেখা গেল সব গণিতে পেয়েছে ডবল শূণ্য।
ব্যাপারটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুনর্মূল্যায়নের জন্যে আবেদন করা হল। কি যে এক ঝামেলার কাজ। এই কর সেই কর, আরও কত কি। এক সময় খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হলো। দেখা গেল, খাতা দেখাই হয়নি, একটি লাল দাগও নেই। এমন হওয়ার কথা নয়, তাও কিভাবে যেন হয়ে গেল। শেষে ফল একটা পাওয়া গেল কিন্তু ততো দিনে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে এক বছর বসে থাকতে হল।
একে হয়ত দূর্ঘটনা বলা যেতে পারে। কিন্তু এরপর থেকে এমন প্রায়ই হতে লাগল। বিশেষ করে কলেজ জীবনে। কলেজে পড়ার জন্যে শহরে আগমন। মনে উড়ু উড়ু ভাব। ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাশ করতে হয়। ক্লাশ করার ফাঁকে কি করে যেন জিনিয়ার দিকে নজর চলে গেল। দূর থেকে দেখেই শান্তি লাগে, এক সময় কাছে আসার সুযোগ পাওয়া গেল। এই সুযোগে মোবারক জানিয়ে দিল জিনিয়াকে সে কতটা পছন্দ করে, জিনিয়া হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে এক টুকরো হাসি উপহার দিল।
মৌনতা নাকি সম্মতির লক্ষণ, মোবারক এই মৌনতাকে ভিত্তি করে এগিয়ে যেত চাইল বহুদূর, মাঝে মাঝে এটা ওটা কিনে দিত জিনিয়াকে, রাত জেগে করা গুরুত্বপূর্ণ নোটগুলো বিনা দ্বিধায় দিয়ে দিতো জিনিয়াকে। যখন দেখা হত তখন কত স্বপ্নের কথাই যে শোনাতো, তা লিখে রাখলে হয়ত উপন্যাসই হয়ে যেত।
সে স্বপ্ন এক সময় ভেঙ্গে গেল।
মোবারক ভাবতেও পারেনি এমন হতে পারে, কিন্তু তার সাথেই এমন সব ঘটনা ঘটে। এইতো সেবার সবাই মিলে পিকনিকে যাবে বলে ট্রেনের টিকেট কাটল। অগ্রীম টিকেট কাটতে হয়েছে। সব টিকিট সিট নাম্বার দেওয়া, তারিখ দেওয়া। যে যার সিটে বসেছে। কিন্তু মোবারকের সিটে বসে আছে আরেক জন। এই নিয়ে ঝগড়া, ঝগড়ার এক পর্যায়ে কামরার অ্যাটেনডেন্স এসে দেখে বলল, মোবারকের টিকেট আরও দুই দিন পরের। ভুলক্রমে এটা হয়েছে। তাই এক সিটে দুইজন। কি আর করা, মোবারকের আর যাওয়াই হল না, তবে চাইলে যাওয়া যেত কিন্তু মন সায় দিল না।
আজ কেন যেন এমন অনেক ছোট খাট দূর্ঘটনার কথা মনে হচ্ছে।
কলেজে একদিন জিনিয়া একটি ছেলেকে নিয়ে আসলো। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর জানা গেল এই ছেলেটির সাথে জিনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে প্রায় দুই বছর হতে চললো। তবে জিনিয়া অকৃতজ্ঞ না, যাওয়ার আগে কলেজ জীবনে এত সুন্দর নোটপত্র দিয়ে সহযোগিতা করার জন্যে ধন্যবাদ দিতে ভুলেনি।
এরপর এক সময় এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হল। এরপর ফল প্রকাশের প্রতীক্ষা, দীর্ঘ এক প্রতীক্ষা। এই দীর্ঘ সময়ে সবার সাথে মোবারক একটি ভালো কোচিং এ ভর্তি হল। পড়ার অনেক চাপ, কোন দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।
এক সময় সব উৎকণ্ঠা দূর করে কোন ঝামেলা ছাড়াই এইচএসসির রেজাল্ট বের হল। সে দ্বিগুন উৎসাহে পড়াশোনা শুরু করলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন নিয়ে ফরম পূরণ করলো, নির্ধারিত দিনে অংশ নিল ভর্তি যুদ্ধে। এক সময় ভর্তি পরীক্ষার ফলও দেওয়া হল। নাহ এবার আর নিরাশ হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট আইইআর এ টিকেছে সে। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় টিকলে আবার একটি ভাইভা দিতে হয়। সে ভাইভার দিন খুব সাজসজ্জা করে সব কাগজপত্র নিয়ে হাজির হল ভাইভা বোর্ডে।
নির্দিষ্ট সময়ে তার ডাক পড়ল, দুইজন শিক্ষকের ছোট কিছু প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবেই প্রদান করল, বাদ সাধল রাগী রাগী চেহারার একজন শিক্ষক।
বিষয়টা খুব জরুরি, এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেটে নামের বানান আলাদা। Mobarok আর Mobarak। বিষয়টিতে মোবারকের কোন হাত নেই কিন্তু ঝামেলা তাকেই পোহাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সময় বেঁধে দিল দুই সপ্তাহের, এর মাঝে এই নামের বানান সংশোধন করতে পারলে হল আর না হয় ভর্তি বাতিল করা হবে।
বোর্ডে যারা গিয়েছে তারাই জানে এখানে কোন কাজের জন্য গেলে কি ঝামেলা পোহাতে হয়। একটা ফর্মে সব কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে, নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা দিয়ে তার রসিদসহ আবেদন জমা দিতে হয়। এক সপ্তাহ পরপর খবর নিতে হয় কাজের কতদূর। যদি দয়া হয় তবে কাজ হবে না হয় দেরি হবে।
মোবারকের এখন কাজ একটাই, বোর্ডে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া। কিন্তু পরিচিত কেউ না থাকায় ভেতরেও যেতে পারে না, কাউন্টার থেকে খোঁজ নিয়ে আসতে হয়, কাগজ এসেছে কিনা।
কাগজ আর আসে না। এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ পার হলো। কাগজ আর এল না। মোবারক হতাশ হয়ে বাড়ি চলে গেল। ঢাকায় আর ভর্তি হওয়া হলো না। দুই সপ্তাহের সময় শেষ, কোন মুখে যাবে ওদিকে। বোকামিটা হয়ত এখানেই করলো। ও যদি ভালোমতো খোঁজখবর নিতো তাহলে বাঁকা পথে কাগজ যোগাড় করতে পারতো, কিছু টাকা হয়ত বেশি লাগতো অথবা যদি আইইআরে আবেদন করতো তাহলে হয়ত কাগজ দেখানোর জন্য আরো সময় পেত। হতাশ হয়ে আর কোন কিছু না করে বাড়ি চলে এল।
ভর্তি হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাড়ির কাছের কলেজে। সেখান থেকে পাশ করলো অনার্স মাস্টার্স। না এবার কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কোন রকম অঘটন ছাড়াই পাশ করে বের হতে পারলো।
পাশ তো করল, চাকরী? সেটা কে দিবে। একের পর এক ইন্টারভিউ দিতে লাগল, কোথায় কিছু হয় না। প্রশ্ন কর্তা যেন বসেই থাকে আটকানোর জন্য। কত জটিল করে প্রশ্ন করা যায় না শুনলে বোঝাই যেত না। আরেকটি বিষয় হলো পছন্দনীয় উত্তর। একটা প্রশ্নের কয়েকটি উত্তর হতে পারে, যদি প্রশ্ন কর্তার মন মতো না হয় তাহলেই গেল। আবার ভালো পরীক্ষা দিয়েও দেখেছে কাজ হয়নি, এইসব গুলোতে আগেই ঠিক করা থাকে কাকে নিবে।
চাকরী খুঁজতে খুঁজতে বয়সই শেষ হয়ে গেল। এমনিতেই ছোট বেলাতেই পড়ায় পিছিয়ে গেছে। কি আর করার। শেষে বাড়িতে গিয়ে মুরগীর ফার্ম দিল। একটা কিছু তো করতে হবে। কিছু সঞ্চয় ছিল তাই দিয়ে শুরু করেছিল। বেশ বড়ই হয়েছিল। ভালই চলছিল। কি এক মোড়ক লাগায় সেটাও চলল না। সব মুরগী একদিনেই শেষ।
আজ সব কথাই চোখের সামনে ভেসে আসছে। পকেটে থাকা টিকিটটা কতবার যে হাত দিয়ে অনুভব করল তার ঠিক নেই। হাতে ধরা পত্রিকাটাও খোলা হয়নি। কি এক অদ্ভুদ শখ চেপেছে মাথায়। হাঁটতে হাঁটতে সে চলে গেল এলাকার বড় এতিমখানায়। আজ তার ভাগ্য পরীক্ষা করবে। দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে।
এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক সব শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলো। এমন প্রস্তাব কেউ কখনও দেয়নি। সামনে বসে থাকা লোকটার কথায় কি যেন আছে। তাই অদ্ভুদ হলেও প্রস্তাবটি মেনে নিল। এর সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে।
প্রস্তাবটা অদ্ভুতই বলা চলে। মোবারক চলে আসার পর লটারীর টিকিটটা পত্রিকার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। যদি মিলে যায় তবে সব টাকা এতিমখানার আর না মিললে নিচে জানালা দিয়ে টিকিটটা ফেলতে হবে। মোবারক নিচেই অপেক্ষা করবে।
মোবারক অনেকক্ষণ হল নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তার খুব টেনশন হচ্ছে। লটারির ফলাফল কি হয় না হয় সেটা ভেবে। একটা নম্বর মিলিয়ে দেখতে এত দেরি হওয়ার কথা না। চলে আসবে নাকি অপেক্ষা করবে ভাবতে ভাবতে উপরে সমস্বরে আনন্দ প্রকাশের শব্দ শুনতে পেলো। এরপর আর অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন মনে করল না।।
রংপুর
০৫ নভেম্বর, ২০১৬
০৫ নভেম্বর, ২০১৬