Saturday, January 29, 2011

লেডিস ফাস্ট

সে অনেক দিন আগের কথা।
কোন এক দুপুরে রাজ ও শাহীর দেখা হল। দেখা হওয়ার কোন কারনই ছিল না, দুজন দু শহরের বাসিন্দা , তারপরও দেখা হল।


অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে, রাস্তায় পানি জমেছে, দেখে মনে হয় পুরো বহ্মপুত্র নদ শহরে প্রবেশ করেছে। শাহী কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছিল, রাস্তায় নামতেই বৃষ্টি। দৌড়ে রাস্তার পাশের দোকানটিতে আশ্রয় নিল।

সেই সময় ঢাকা থেকে আসা বাস থেকে নামলো রাজ। কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা দোকানে ঢুকে গেল সে।
দু জনেই আশ্রিত; তাই তাদের মধ্যে একটু সহানুভূতির টান লক্ষ করা গেল। এই সহানুভূতির টানেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

চারপাশের দৃশ্যরা সব উধাও; রইলো পরে শুধু তারা দুইজন। আর রইলো বৃষ্টি।
ঘন্টা খানিক পর বৃষ্টি কমলো, কিন্তু পুরো শেষ হল না। রাজ আজই প্রথম এই শহরে এসেছে, বলতে গেলে কিছুই চিনেনা। আজ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্ম উঠানোর শেষ দিন। কিন্তু কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় তা সে জানেনা। আশে পাশে তাকিয়ে যাদের দেখলো তাদের মাঝে শাহীকেই বিশ্বাস যোগ্য মনে হল। তাই অকপটে তাকেই জিগ্যেস করলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে যাব?

শাহী আদর মাখা গলায় কিভাবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হবে তা জানিয়ে দিলো।
এভাবেই শুরু।
রাজ ভর্তি হল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শাহী তখনো কলেজের ছাত্রী। তার পরও তাদের মাঝে প্রতিদিন দেখা হতে লাগলো। কখনো রাজ আসে শহরে, বহ্মপুত্রের ধারে, কখনো শাহী যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দিন যায় রাত আসে; রাত যায় আবার দিন আসে।

একদিন রাজ তাকে জানালো এই জেলার দুর গাঁয়ে তাদের একজন চাচা ছোট বেলায় চলে এসেছিল। একদিন সময় করে খুঁজে বের করবে। শাহী জানতে চাইলো গাঁয়ের নাম ও তার চাচার নাম।
রাজ জানাল। শাহী কি কিছুটা চমকে গেল??‌?

এ যে তার বাবার নাম! গাঁয়ের নামটাও মিলে যাচ্ছে। যদি তাই হয় তবে তো সর্বনাশ।
বাবা তার ভাইয়ের নামটিও শুনতে চায়না। এখনো কিছু রাগ মনের মাঝে পুশে রেখেছে।
শাহীর দাদা মারা যাওয়ার পর সব চাচা মিলে শাহীর বাবাকে ঠকিয়ে জমি জমা সব লিখে নেয় নিজেদের নামে। আর শাহীর বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনা কি ভোলার মতো‌?

আজও সে রাগ পুষে রেখেছে শাহীর বাবা। শাহী মাঝে মাঝে বাবাকে বোঝাতে গেছে, ভাইদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। কিন্তু তার বাবা তেড়ে এসেছে তাকে মারার জন্য।

আজ যখন শুনলো রাজ ও সে চাচাত ভাইবোন তখন যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
এখন কি হবে?
তাদের সম্পর্ক কেউ মানবেনা।
কিন্তু ওরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচবেনা।
কি হবে এ জীবন রেখে??
রাজশাহী সিদ্ধান্ত নিল এ পৃথিবীতে আর নয়।

বহ্মপুত্রের উপর দিয়ে যে রেল সেতু চলে গেছে তার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজন। এক সময় তারা দেখলো হাঁটতে তারা নদের মাঝখানে চলে এসেছে। দুজন একসময় থামলো।
আজও বৃষ্টি ঝরছে অঝর ধারায়, সেই প্রথম দিনের মতো।
বহ্মপুত্র নদ যেন আজ রুদ্ধমূর্তি ধারণ করেছে। সব যেন গ্রাস করে নিবে।
চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এই পৃথিবীতে আর নয়।
কিন্তু কে আগে???

শাহী বললো, আমি তোমার মরন দেখতে পারবোনা, আমি আগে লাফ দেব তার পর তুমি।
রাজ তাকে থামালো। রাজ বললো আমি চেয়ে চেয়ে তোমার মরণ দেখবো? এই কি হয়। আমি কি করে সহ্য করবো আমার প্রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি আগে।

কথায় কথা বাড়ে। এক সময় সব তর্কের অবসান হয়। রাজ পকেট থেকে মূদ্রা বের করে, টস হয়। রাজের আগে মরার বিষয়টি ফয়সালা হয়।

কিন্তু শাহী জানেনা, ওটা একটা ট্রিকস ছিল।
শাহী মেনে নেয়। রাজ শাহীর দিকে চেয়ে চেয়ে লাফ দেয় প্রমত্ত প্রলয়ংকরী বহ্মপুত্রে।
শাহী কিছুক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখে। এবার তার পালা। কিন্তু কি ভেবে যেন লাফ দেয়া হয়না। শহরের দিকে হাটতে শুরু করে।
কাহিনী এখানে হয়তো শেষ হতে পারতো‌- কিন্তু তা আর হলোনা।

ব্রিজ এর নিচে একটু জায়গা আছে যেখানে হাসু পাগলা নিয়মিত বসে থাকে। সে আবার শিক্ষিত পাগল, মানে কিছু কিছু ইংরেজি বলতে পারে।

শুরু থেকেই সে সব দেখছিল, কিন্তু সে তো পাগল, তাই তার কিছু বলা সাজে না।
শাহী চলে আসার পর লুকিয়ে লুকিয়ে ব্রিজের নিচ থেকে সে উপরে উঠে আসে।
শাহী যখন চোখের আড়াল হয়ে যায় তখন সেও শহরের দিকে হাঁটতে থাকে।
তার মুখে তখন একটি কথাই শুধু শোনা যায়- লেডিস ফাস্ট, লেডিস ফাস্ট..................
আপনার মন্তব্য লিখুন

ফেসবুক লাইক ও শেয়ার